আমার সাইক্লিস্ট হওয়ার গল্প, পর্ব : ১


২০১৮ সালের শুরুর দিকে হঠাৎ করে বিক্রয় ডট কম এ স্ক্রল করতে করতে একটা Landao সাইকেলের অ্যাড দেখতে পাই, সাইকেল টা আমার খুব পছন্দ হয়। তাই আমি আমার হাতের মোবাইলটা বিক্রি করে সেই সাইকেলটা কিনি। এরপর আমি ফেসবুকে দেখতে পাই সাই‌কেল দি‌য়ে ইনকাম করুন (পাঠাও ফুডে রাইডার নিয়োগ চলছে) তো আমি সেখানে একাউন্ট খুলেই আমার কো‌র্টের চাকরিটা ছেড়ে দেই। পাঠাও ফুড এ কাজ করার সুবাদে প্রতিদিন আমি প্রায় ৩০ কিলো সাইকেল চালাতে হতো। এই সাইকেলটা কেনার আগে থেকে আমার অনেক ইচ্ছা ছিল আমি একটা সাইকেল গ্রুপ বানাবো যেখানে অনেকগুলো মেম্বার থাকবে তাদের সাথে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাব সাইকেল নিয়ে।
খুব একটা সারা পাবনা ভেবে আমি ফেসবুকে সার্চ করতে থাকি সাইকেল গ্রুপের, একদিন সার্চ করতে করতে চোখে পড়ে বিডি সাই‌ক্লিস্ট গ্রুপের, দেখলাম মেম্বার অনেকগুলো তাই সাথে সাথে জয়েন রিকোয়েস্ট দিয়ে দিলাম। এরপরে বিডিসির সাথে আমার যাত্রা শুরু হয়। তো ফুড ডেলিভারীর কাজ করতে করতে হঠাৎ খেয়াল করলাম অন্যান্য সবার সাইকেলে হাইড্রোলিক ব্রেক আছে কিন্তু আমার সাইকেলে ভি ব্রেক। তাই আমি একদিন ২৫শ' টাকার মতো নিয়ে বংশালে যাই আমার সাইকেলটাকে হাইড্রোলিক ব্রেক করার জন্য। বংশাল গিয়ে অনেকগুলো দোকান ঘুরে দেখলাম আমার এই সাইকেলটাকে হাইড্রোলিক ব্রেক করতে অনেক টাকা খরচ হবে, তাই একজন পরামর্শ দিলো এই সাইকেলটা বিক্রি করে আরও কিছু টাকা মিলিয়ে একটা হাইড্রোলিক ব্রেক সাইকেল কেনার জন্য। আমিও এই ভেবে সাথে সাথে সাইকেলটা বিক্রি করে দেই এবং হাইড্রোলিক সাইকেল কেনার জন্য সেকেন্ডহ্যান্ড দোকানে যাই। ওখানে গিয়ে দেখলাম সেকেন্ড হ্যান্ড হাইড্রোলিক সাইকেল এর দাম তারা যা চাচ্ছে তা দিয়ে আমি নতুন সাইকেল কিনতে পারব।
তাই নতুন ক‌য়েকটা সাইকেলের দোকানে গিয়ে দরদাম করতে করতে আমার বাজেটে মধ্যে একটা সাইকেল পছন্দ হয় যার মডেল ছিল ফনিক্স হ্যারিকেন।

 সাথে সাথে আট হাজার আটশো  টাকা দিয়ে কিনে ফেলি। শুরু হয় আমার নতুন সাইকেলের যাত্রা।
এর দেড় মাস পর চলে আসে রমজানের ঈদ। চাঁদ রাত পর্যন্ত ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের দিকে রাত দশটা পর্যন্ত ফুড ডেলিভারি করে বাসায় চলে যাই। এদিকে ঈ‌দের প‌রেরদিন আমার দুই বন্ধু আমাকে না জানিয়ে শরীয়তপুর ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করে। তাই ঈদের পরের দিন আমিও প্ল্যান করি সাইকেল নিয়ে শরীয়তপুর যাব। যেই ভাবা সেই কাজ ঈদের তৃতীয় দিন সকাল দশটার দিকে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি শরীয়তপুরের উদ্দেশ্যে। পোস্তগোলা ব্রিজ পার হয়ে সোজা মাওয়া দিকে যেতে থাকি,

মাঝখানে আব্দুল্লাহপুর বাজারে ব্রেক দিয়ে সকালের নাস্তা গরম ভাত আর আলুর ভর্তা দি‌য়ে সেরে নেই। এরপর আবার নিমতলা বাজার গিয়ে রেস্ট নেই এভাবে

 প্রতি ১২ কিলো পরপর ব্রেক নিয়ে দুপুর একটার দিকে পৌঁছে যাই মাওয়া ফেরিঘা‌টের লঞ্চঘা‌টে।
লঞ্চঘাটে গিয়ে মাঝিরঘাট যাওয়ার লঞ্চের লো‌কের সাথে আমার সাইকেল ও আমার ভাড়া দরদাম করে নেই, আমার ভাড়া ৫০ টাকা ও সাইকেলের ভাড়া ২৫ টাকা টোটাল ৭৫ টাকা দিয়ে পদ্মা নদী পার হই। মাঝিরঘাট পৌ‌ছে লঞ্চ থেকে নেমে আবার শরীয়তপুর সদরের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। মাঝপথে আর কোন ব্রেক না দিয়ে সোজা শরীয়তপুর সদরে পৌছাই সন্ধ্যা ছয়টার দিকে। এরপর এক বন্ধুকে ফোন করে সারপ্রাইজ দেই কিন্তু তখনো তাকে বলিনি আমি সাইকেল নিয়ে ঢাকা থেকে এসেছি। তার সাথে কথা বলে তার বাড়ির দিকে রওনা দেই। শরীয়তপুর সদর থেকে আরও ১৫ কিলোমিটার ভিতরে তার বাড়ি। তার বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে তাকে মেইন সারপ্রাইজ টা দেই, সে দেখে চমকে উঠে ও অবাক হয়ে যায়।

এরপরে দুইদিন শরীয়তপুরে বন্ধুর বাসায় বেড়ানোর পর ঢাকা চলে আসি কিন্তু প্রথমবার লং ট‌্যুর তাই আর সাই‌কেল দি‌য়ে ঢাকা আসার শ‌ক্তি পাইনি য‌দিও দুই‌দিন রেস্ট এ ছিলাম তাই সাইকেল বাসে করে ঢাকা আ‌সি।
বাসায় এসে দেখি সাইকেলে প্রচুর কাদা ও ময়লা লেগে আছে তাই আমি নি‌জে ফ্রেশ হওয়ার আগে সাইকেলটাকে খুব ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করি তারপর আমি নিজে ফ্রেশ হয়ে সাইকেলটা বাসার দোতালার বারান্দায় (বারান্দা দি‌য়েই ঘ‌রে যাওয়ার রাস্তায়) তালা মেরে গেট লাগিয়ে ঘুমিয়ে যাই।
সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার সাইকেলটা নেই,
দেখলাম টয়লেট পরিষ্কার করার যেই লম্বা ব্রাশ থাকে সেই ব্রাশের রড দুই টুকরো করে আমার সাইকেলের শিকল ফাক করে সাইকেল নিয়ে গিয়েছে। খুব কষ্ট পেলাম কারণ ১২ ঘণ্টা আগে এই সাইকেল দিয়ে আমার প্রথম রেকর্ড (মা‌নে প্রথম লং ট‌্যুর) করেছি। এরপর কয়েকদিন বেকার থাকার পর আমার বড় আপু (খালাতো বোন) আমাকে চার হাজার টাকা ধার দেয় সাইকেল কেনার জন্য আর আমার বন্ধুদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা ধার নিয়ে, পাঁচ হাজার টাকা দি‌য়ে আবার একটা সেকেন্ড হ্যান্ড সাইকেল কিনি বংশাল থেকে।

তো কেনার পরে আস্তে আস্তে সাইকেলটাতে নানান ধরনের সমস্যা দেখা দেয় টুকটাক কাজ করিয়ে আমার সাইকেলটা কোনরকমে সচল রাখি চার মাস যাওয়ার পর সাইকেলটা সম্পূর্ণ সার্ভিসিং করি
মোটকথা সাইকেলের ফ্রেম বাদে প্রতিটা পার্টস চেঞ্জ করেছি, কারণ সাই‌ক্লিস্ট গ্রু‌পে রেগুলার হ‌বো। যেই সাই‌কে‌লের দোকান থেকে কাজ করি‌য়ে‌ছিলাম, সেই দোকানে কিছু টাকা বাকি রেখেছিলাম। এরপর চলে আসে নতুন বছর 2019 পাঠাও ফুড এ কাজ করতে করতে

চলবে...