আমি প্রায়সই দেখে থাকি যে, লংরাইডে যাবার সময় বিশেষ করে একাধিক দিনের রাইডে যাবার সময় সাইক্লিস্ট ভাই / বোনে রা এক গাট্টি কাপড় চোপড় আর আনুসাঙ্গিক জিনিস পত্র নিয়ে সাইকেল এর ওজন ২ মোন বাড়িয়ে ফেলে। আর প্রয়োজনের সময় প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো না পেয়ে হতাস হয়। বিশেষ করে নব্য সাইক্লিস্ট ভাই / বোনেরা অতি উৎসাহে এই ভুল টি করে থাকেন। আমার এক বার এক উদভট মেয়ে সাইক্লিস্ট এর সাথে ডে নাইট রাইডের দূর্ভাগ্য হয়েছিল। সেই আপুটি তাহার সাথে ইয়া বড় এর মেকাপ বক্স। (ভাবা যায়) নিয়ে এসেছিল। তাহার প্রতি ২ - ৩ ঘন্টা পর পর মেকাপ করতে হত আর সেলফি তুলতে হত।
আপনার লং রাইডে কি কি জিনিস পত্র নিতে হবে তার একটি লিস্ট আমি করেছি। যদিও প্রায় ৪ মাস আমি কোন লং রাইডে যাই নি। কিন্তু আমার করা লাস্ট লং রাইড গুলো তে আমি এই লিস্ট অনুযায়ি জিনিস পত্র নিয়েছি। আর আমার কোন সমশ্যা ও হয় নি।
।
১। “পানির বোতল” সবার প্রথমে আপনার দরকার পর্যপ্ত পরিমান বিষুদ্ধ পানির যোগান। লং রাইডে আপনাকে অনেক টা পথ সাইকেল চালাতে হবে। এতে করে আপনার অবশ্যই ডি হাইড্রেসন হবেই। আর অতিরিক্ত ডি হাইড্রেসন এ আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। এ ক্ষেত্রে আরো একটি বিষয় লক্ষনীয় বিষয় হল আপনার পানির বোতল । আপনার পানির বোতল সাইকিলিং বোতল হলে ভালো হয়। তা না হলে আপনাকে সর্বদা পানি পান করার সময় অল্প অল্প করে চুষে চুষে পানি পান করতে হবে। ঢক ঢক করে পানি পান করলে আপনার ঠিক মত পিপাষা ত মিটবেই না উপরন্ত অতিরিক্ত পানি পান করার দরুন আপনার পেট ভারি হয়ে যাবে আর হালকা ব্যাথা ও হবে। এতে করে আর আপনি ঠিক মতন সাইকেল চালাতে ও পারবেন না। আপনি পানিতে চাইলে গ্লুকোজ জাতীয় পদার্থ মেশাতে পারেন। ,,,
।
২।“একটি টুল্স বক্স”। যাতে আপনি আপনার সাইকেল এর এল কি , ছোট একটি স্লাই, স্ক্র ড্রাইভার , লিক সারানোর টেপ। টায়ার খোলার যন্ত্র ইত্যাদী রাখতে পারেন। অনেকেই বলেন এক্সট্রা টায়ার টিউব নিয়ে যেতে। আমি ইহার পক্ষপাতিত্ব করি না। আমি সাইকেল এ এতটা পাম কেন দেব যে তা ফেটে যাবে।,,, এটা আমার কমনসেন্স। আর লিক হলে আমি তা লিক সারানোর টেপ দিয়ে অতি সহযেই সেরে নিতে পারব।, পুরাতন টায়ার নিয়ে লং রাইযে যাওয়া টা বোকামি ছাড়া কিছুই না।
।
৩। “পাম্পার” সাইকেল এ যেমন বোতল রাখার যায়গা থাকে তেমনি প্রতিটি সাইকেল এ চাইলেই ছোট পাম্পার রাখার ব্যাবস্থা ও করা যায়।
।
৪। “হেড লাইট” লং রাইডে বা যে রাইডে রাত বা সন্ধা কালীন সাইকেল রাইডের আসংকা থাকে সেই রাইডে অবশ্যই একটি হেড লাইট হ্যান্ডেল বারের সাথে লাগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।,,
।
৫। “পাওয়ার ব্যাঙক ও মোবাইল” যরুরী সেবা পেতে সাথে অবশ্যই মোবাইল ফোন নেয়া বাঞ্চনিয়। আর ফোন টি ডিস চার্য হলে তা চার্য দেবার জন্য একটি পাওয়ারব্যাঙক ও চার্যার সংগে নিতে হবে। চেষ্টা করতে হবে দলের সকলে মিলে আলাদা আলাদা করে প্রতিটি কম্পানির সিম কার্ড সঙ্গে নেয়া। কোন এলাকায় কোন সিম এর নেটওয়ার্ক ভালো তা আমরা জানি না।,, তাই সকল সিম দলের সবাই মিলে নেয়া টা ই উত্তম।
।
৬। “পোষাক” আপনার রাইড যদি এক দিনের রাইড হয় । অর্থাৎ আপনি ভোরে রওনা করবেন আর সন্ধায় ফিরে আসবেন । তাহলে আপনার পরনের পোষাক ব্যাতীত আলাদা পোষাক নেয়ার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না।, আপনি যদি দুপুরে সেখানে গোসল করার প্লান করেন আর আপনি যদি ছেলে হন তাহলে একটি লুঙ্গি বা ছোট প্যান্ট সাথে নিলেই যথেষ্ট। আর একটি ছোট গামছা
আর যদি আপনি মেয়ে হন তাহলে আমি দুঃক্ষিত। আপনার দুপুরে গোসল করাটা উচিৎ হবে না। আপনি সকালে গোসল করে রওনা করুন আর রাতে ফিরে পুনরায় গোসল করুন। দুপুরে হাত মুখ ধুয়ে নিন। শুধু শুধু বাড়তি জামা কাপড়ের কি দরকার আছে বলুন ত। আর রাইডে কখনই শার্ট পড়ে যাবেন না। উত্তম হল সাইকেলিং যার্সি । আর তা না থাকলে উজ্বল রঙের যার্সি বা গেঞ্জি। আর প্যান্ট এর ক্ষেত্রে ট্রাউজার কোয়ালিটির প্যান্ট গুলো ভালো। নতুন হলে জিঞ্চ পড়ে কখনই যাবেন না। তবে অনেকেই জিঞ্চ পড়ে আমার মতন সাচ্ছন্দ ফিল করে।,,
আর আপনি যদি ২ বা ৩ বা তার থেকেও বেশি দিনের লং রাইযে যান। তাহলে আপনার উচিৎ হবে না, আপনার পরনের যার্সির সাথে একটি লুঙ্গি বা ছোট প্যান্ট একটি গামছা এর বাহিরে কিছু নেয়ার চিন্তা করা ।কিআপনি সারাদিন ত সাইকেল ইচালাবেন। বিয়ে বাড়িতে নেমন্তন্য খেতে যাবেন না । এক সেট পড়ে ত যাবেন সাথে মাত্র এক সেট নিলেই আপনার হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন সন্ধায় রাইড শেষ করে আপনার সেই দিনের ডেসটিনেষন পয়েন্ট এ গিয়ে গোসল এর সময় আপনার সেই দিন পড়ে থাকা পোষাক ধুয়ে নিয়ে সারা রাত শোকাতে দিলেই পর দিন সকালে তা শুকিয়ে যাবে। আর যদি আপনি বিষয় টা নিয়ে খুদ খুদ মনভাবাপন্ন হয়ে পড়েন তবে পরনের সেট এর সাথে মাত্র ১ সেট বেশি নিতে পারেন। এর থেকে বেশি ৩ টা বা ৪ টা সেট কাপড় নিয়ে আপনার কোন কাজেই আসবে না।,,,
৭।।“ মাস্ক ও গ্লাস” ইহা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি সারাদিন যখন সাইকেল চালাবেন। তখন আপনি সর্বদা কিছুটা হাপিয়ে থাকবেন। এতে আপনার স্বাস প্রস্বাস দ্রূত হবে। যার প্রভাবে রাস্তার সকল ধুলাবালি আপনার ফুসফুসে গিয়ে যমা হবে। দিন শেষে কাশি আর বুকে ব্যাথা উপহার পাবেন। দিন শেষ হতে হবে না ঘন্টা তিনেক পরেই টের পাবেন। তাই একটি মাস্ক সাথে রাখলে এই ধুলা বালি থেকে আপনার ফুসফুস নীরাপদে থাকবে। আর চোখে একটা সানগ্লাস বা নাইট ভিষন গ্লাস থাকলে চোখ টা ও ধুলা বালি থেকে মুক্তি পাবে আবার স্টাইল টা ও যবরদস্ত হবে। মাথায় হেলমেট। চোখে সানগ্লাস। মুখ মাস্ক এ ঢাকা , হাতে গ্লবস , পায়ে জুতা ।< অস্থির স্টাইল। বাইদা ওয়ে ,, রাইডের সময় কেডস জুতা ব্যাবহার করা অতি জরুরী। সে বিষয়ে পরে আলোচনা হবে।
।
৮। “ছোট্ট একটি মেডিকিড ” বা মেডিকেল কিডস সাথে নিতে পারেন। ফার্মেসি তে গিয়ে চাইলেই দেবে। মেডি কিডস এর ভেতরে একটি ছোট হেক্সাসল (কাটা ছেড়ার জন্য) / ছোট ডেটল (গোসল এর জন্য) / ব্যান্ডেজ পেপার। / পেইন কিলার ইনজেকসন / কয়েক টা ওয়ান টাইম ব্যান্ডেস টেপ / নরমাল ব্যান্ডেজ টেপ/ ছোট একটি ফাস্ট পেইন রিলিজ মলব বা এক্সপ্রে। । থাকে। সব মিলে ২০০ বা ৩০০ টাকার বেশি দাম হবে না। পেইন কিলার ইনেজেকসন না নিলে আপনার ১৩০ টাকা কম লাগবে।,, তবে ইনজেকসন টা নেয়া ই ভালো। কোন বড় ধরনের দূর্ঘটনা তে পেইন কিলার ইনজেকসন এর জুড়ি নেই। আপনার পা ভেঙে গেলেও একটি পেইন কিলার ইনজেকসন নিয়ে আপনি মিনিমাম ১০ কিলো সাইকেল চালাতে পারবেন।
।
।
।
এখন আসি এই জিনিস গুলো আপনার সাইকেল এর কোথায় কোনটা রাখবেন।
১। পানির বোতলঃ- সকল সাইকেল এ পানির বোতল রাখার যায়গা থাকে। আপনি সেখানে অনায়েসে একটি পানির বোতল রাখতে পারবেন।
।
২। টুলবক্সঃ আপনার সাইকেল এর সাথে একটি ছোট ফ্রেম ব্যাগ লাগিয়ে নিন। ফ্রেম ব্যাগ টি সাইকেল এর ফ্রেমের সামনের দিকে লাগাতে হয়। ফ্রেম ব্যাগ এর এক পাশে জ্যামিতি বক্স এ করে আপনার টুল্স গুলো অনায়েশে রাখতে পারেন।
।
৩।“পাম্পার” বাজারে যে নিনজা পাম্পার পাওয়া যায় সেগুলো আপনি অনায়েসে আপনার সাইকেল এর ফ্রগ/ পেছনের সিট এর নিচে বা সিট এর নিচ থেকে যে রড টা পেছনের চাকার মাঝ বরাবর যায় সেই রড এর সাথে রাখতে পারেন। একটি কেস বানিয়ে ক্যাবল টাইটার দিয়ে সুন্দর ভাবে সাইকেল এর উক্ত স্থান গুলোতে অনায়েসে পাম্পার রাখতে পারেন।
।
৪। “হেড লাইট” এটা অতি স্বাভাবিক ভাবেই সকলেই সাইকেল এর হ্যান্ডেল বারের সাথে লাগায়
।
৫।“পাওয়ার ব্যাঙক ও মোবাইল” ও চার্যার আপনি অনায়েসে আপনার ফ্রেম ব্যাগ এর অপর পাশে রাখতে পারেন। আর আজ কাল কার ফ্রেম ব্যাগ এ উপরের অংশে মোবাইল রাখার জন্য ওয়াটার প্রুভ পকেট থাকে। ইতমধ্যে আমরা এক পাশে টুল বক্স রেখেছি। তাই অপর পাশে পাওয়ার ব্যাঙক ও চার্যার।।
।
৬। “পোষাক” লং রাইডে কখনই কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে তাতে পোষাক নেবেন না। সাইকেল এর পেছনের কেরিয়াল লাগিয়ে নিয়ে একটি ব্যাক কেরিয়াল ব্যাগ কিনে লাগিয়ে নিন। ব্যাগ টি সাইকেল এর দু পাশে দুই অংশ ঝুলে থাকে । যা হুইল ক্র বা ফিতা দিয়ে কেরিয়াল এর সাথে আটকে দিতে হয়। দুই পাশের দুই পকেট এ আপনি অনায়েশে এক সেট সাইকেলিং পোষাক। এক সেট নাইট ড্রেস আর লুঙ্গি / গামছা নিতে পারবেন। ব্যাগ টা খুব পাতলা টাইপের হয়। তাই দেখতেও অনেক বড় সর ব্যাগ মনে হবে না।
।
৭। “মাস্ক আর সানগ্লাস” ভাই আপনার যেখানে রাখার রাখুন। তবে মুখে রাখাটাই ভালো
।
৮। “মেডিকিডস” এই ছোট্ট কিউট বাক্স টা আপনার সাইকেল এর সামনে হ্যান্ডেলবারের মাঝখানে নিচের দিকে ক্যাবল টাইটার দিয়ে আটকে রাখতে পারেন।
।
।আমার হিসেবে এখানে আপনি খুব হলেও ২ বা আড়াই কেজির বেশি বহন করছেন না।,, যদি আপনার কাপড়ের ওজন ৩ কেজি না হয়
।ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি তে দেখার অনুরোধ এ,,
।
হ্যাপি সাইকেলিং..
বিশেষ দ্রষ্টব্য : এই পোস্ট টি বিডি সাইক্লিস্ট গ্রুপ থেকে নেয়া।
